বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:
আশঙ্কাই সত্য হল। পশ্চিমবাংলায় ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হতেই আংশিক লকডাউন জারি হয়ে গেল। শুধু তাই নয়, এ কথা বলেও রাজ্যবাসীকে সতর্ক করে দিয়েছে নবান্ন, যদি এই পদক্ষেপে পরিস্থিতির উন্নতি না হয়, তা হলে পূর্ণ লকডাউনের পথেই হাঁটবে সরকার। স্বভাবতই আরও বড় আশঙ্কার মাঝেই আপাতত দুলছেন রাজ্যের সাধারণ মানুষ। করোনার আগ্রাসন রুখতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে শুক্রবার থেকেই রাজ্যে একাধিক বিধিনিষেধ জারি হয়েছে এবং কার্যকর হয়ে গিয়েছে নিষেধাজ্ঞা। এই নির্দেশ মানা না হলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে বলেও সতর্ক করে দিয়েছে।
এদিন বিকেলে নবান্নর তরফে ঘোষণা করা হয়েছে, অনির্দিষ্ট কালের জন্য হোটেল, বার, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, শপিং মল, বিউটি পার্লার, স্পা, সুইমিং পুল, জিম, স্পোর্টস কমপ্লেক্স বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনও রকম ধর্মীয়, সামাজিক, বিনোদনমূলক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না। সকাল সাতটা থেকে বেলা দশটা, বিকেল তিনটে থেকে পাঁচটা পর্যন্ত বাজার খোলা রাখা যাবে। তবে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য এবং জরুরি পরিষেবাগুলিকে এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে রাখা হয়েছে। ওষুধের দোকান এবং মুদিখানা খোলা থাকবে। তবে রাস্তাঘাটে লোকজনের যাতায়াত করা নিয়ে কোনও নিষেধাজ্ঞা এখনও জারি করা হয়নি। তবে প্রয়োজন ছাড়া অযথা রাস্তাঘাটে বের না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সরকারি বা বেসরকারি পরিবহণের ওপর এখনও কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়নি। অফিস–কাছারি বন্ধ রাখারও কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তবে কম লোক নিয়ে কাজ করা এবং সম্ভব হলে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের পরামর্শ নবান্নের তরফে আগেই দেওয়া হয়েছিল।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার ছিল পশ্চিমবাংলার বিধানসভা নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। কিন্তু করোনা সংক্রমণ যে ভাবে গোটা রাজ্যে বাড়ছে, তাতে অনেকেই মনে করেছিলেন, হয়তো ভোট শেষ হলেই লকডাউনের পথে যাবে রাজ্য সরকার। ততটা কড়া না হলেও রাজ্য সরকারের এই পদক্ষেপ কার্যত রাজ্যবাসীর সেই আশঙ্কাকেই সত্য প্রমাণ করল বলেই অনেকে মনে করছেন। এর মধ্যে নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় কোভিড সংক্রমিত হয়েছেন ১৭ হাজার ৪১১ জন, মৃত্যু হয়েছে ৯৬ জনের। ফলে এদিন সংক্রমণের হার ছিল ৩২.৭০ শতাংশ। এদিন করোনা পরীক্ষা হয়েছিল ৫৩ হাজার ২৪৮ জনের। এদিন গোটা রাজ্যে টিকা নিয়েছেন ১ লক্ষ ৫০ হাজার ০৪৯ জন। এখনও পর্যন্ত রাজ্যে টিকা নিয়েছেন মোট ১ কোটি ৭ লক্ষ ৮২ হাজার ১৩৬ জন। পাশাপাশি এদিন রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ৪৫ বছর বা তার ঊর্ধ্বে যাঁরা ইতিমধ্যে কোভিড ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ নিয়েছেন, তাঁদের অবশ্যই দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হবে। আর বাকি যে প্রথম ডোজ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, তা স্বাভাবিক ভাবেই চলবে।
এরই মধ্যে রবিবার সকালে রাজ্য জুড়ে শুরু হচ্ছে ভোট গণনা। এর আগে নির্বাচন কমিশনের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে ফল ঘোষণার পর রাজ্যে কোথাও কোনও দল বিজয় মিছিল করতে পারবে না। এদিন নবান্নর তরফেও জানানো হয়েছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ মেনে বিধানসভা নির্বাচনে বিজয়ী দল বা দলগুলি কোনও রকম বিজয় মিছিল যেন না করে। আবার এদিনই কলকাতা হাইকোর্টও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ভোটের ফল ঘোষণার দিন বা তার পর কোনও রকম বিজয় মিছিল করা যাবে না। এদিন এই নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল এবং বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ। বর্তমান কোভিড সময়ে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ যেন রাজনৈতিক দলগুলি মনে রাখে এবং তা পালন করে, সেই নির্দেশও দিয়েছে ওই বেঞ্চ।